কথায় বলে জলের মতো সহজ। কিন্তু জল কি সত্যিই আর জলের মতো সহজ? না বোধহয়। বিশেষ করে যখন বিশেষজ্ঞরা গম্ভীর মুখে সেমিনারের মঞ্চে বসে বলেন আমাদের চারপাশের জলে বিবিধ রকম গণ্ডগোলের জিনিসপত্র মিশে থাকার কথা, যার যে কোনো একটিও যদি চুপচাপ আপনার শরীরে ঢুকে পড়ে তাহলেই চিত্তির। তখন ডাক্তার ডাকো রে, বদ্যির কাছে ধর্না দাও রে এমনিতরো হাজার ঝামেলা। ঠিক সময়ে সামাল দিতে না পারলে শেষমেশ বিপদ আরো গড়াতেই পারে। অন্তত সেটাই স্বাভাবিক। আর এই হাঙ্গামা থেকে পরিবেশ তথা আপনাকে বাঁচাতেই যাঁরা দিবারাত্র খেটে চলেছেন তাঁরা হলেন ওয়াশ পলিসি কনসালটেন্ট, WASH অর্থাৎ Water, Sanitation এবং Hygiene।
কী নিয়ে কাজ করেন এই ওয়াশ পলিসি কনসালটেন্টরা?
— ওয়াশ পলিসি কনসালটেন্টরা কাজ করেন ওয়াটার সিকিউরিটি, ওয়াটার কোয়ালিটি মনিটরিং, ট্রান্স বাউন্ডারি ওয়াটার বাউন্ডারি, হেলথ জেন্ডার এবং ওয়াটার, জল থেকে হওয়া নানা অসুখ – ফ্লুরোসিস, আর্সেনিকোসিস, এ থেকে ই পর্যন্ত নানা জাতের হেপাটাইটিস থেকে শুরু করে আবহাওয়ার পরিবর্তনে জলের ভূমিকা ইত্যাদি নানারকম সমস্যা নিয়ে - যার মধ্যে এমনকি ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জিং আর মেন্সট্রুয়াল হাইজিন ম্যানেজমেন্ট অব্দি কী নেই! সেই সঙ্গে এঁদের দায়িত্বের মধ্যে জল সরবরাহ, স্যানিটেশন এবং সাধারণভাবে পরিবেশের স্বাস্থ্য রক্ষার্থে বিভিন্ন এলাকায় তথা অঞ্চলে ওয়াশ-এর প্রয়োজনীয়তা বিচার ইত্যাদিও পড়ে যায়।
ওয়াশ রিসার্চ নামে বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনা করে কি ডিগ্রি পাওয়া সম্ভব?
— নিশ্চয় সম্ভব। হাইড্রোলজি, জিওলজি, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ইত্যাদি নিয়ে পড়েও আপনি অনায়াসে এই বিষয়ে মনোযোগ দিতেই পারেন। প্রথমে স্নাতক কোর্স সেরে নিয়ে তারপর স্নাতকোত্তর, এমনকি পি এইচ ডি পর্যন্ত করা যায় এই বিষয়ে।
এবার আসল প্রশ্ন। কত টাকা মাইনে পাওয়া সম্ভব এই বিষয় নিয়ে পড়ে?
— এই বিষয়ে যোগ্যতার সঙ্গে স্নাতকোত্তর সারতে পারলে গোড়ায় ভারতীয় মুদ্রায় ৪০,০০০ টাকা পাওয়াও সম্ভব। আর ওয়াশ রিসার্চ নিয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন, সেই সঙ্গে আছে ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাকগ্রাউন্ড? মাইনে নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কোনো প্রয়োজন নেই। বরং চিন্তা করুন সম্ভাবনা নিয়ে।
এই বিষয়ে সফল ক্যারিয়ার গড়তে হলে কিরকম এপ্রোচ প্রয়োজন?
— আমাদের, মানে একটি 'ডেভেলপিং' দেশে বসে এই বিষয়ে কাজ করতে গেলে প্রথমত যেটা জরুরি সেটা হল প্যাশন। মনে রাখুন, আপনাকে কাজ করতে হবে সব রকম জটিলতার মোকাবিলা করার মানসিকতা নিয়ে। কেবল ডেস্ক জব ছাড়াও আপনাকে ফিল্ড ওয়ার্কেও পিছিয়ে থাকলে চলবে না। সেই সঙ্গে বিষয়টিকে নিয়ে হৃদয়বত্তার সঙ্গে ভাববার ক্ষমতাই পারে আপনাকে সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে।
চ্যালেঞ্জিং অ্যাটিচুড আপনার একমাত্র সম্পদ? তাহলে আর দেরি কেন? জান লড়িয়ে দেওয়া যাক, নাকি?

দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপারেশনাল রিসার্চে এম এস সি করার পর কমনওয়েলথ স্কলারশিপ কমিশনের সম্পূর্ণ স্কলারশিপ পেয়ে আকাঙ্ক্ষা পঠানিয়া ইউনিভারসিটি অফ ব্রিস্টল (ইউ কে) থেকে ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্টে পৃথক একটি এম এস সি ডিগ্রি লাভ করে এখন পি এইচ ডি করছেন। বিশ্বব্যাঙ্ক, ইউনিসেফ, দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন, আগা খান ফাউন্ডেশন সহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আকাঙ্ক্ষা সকল প্রান্তিক মানুষের নাগালে পরিষ্কার ও পর্যাপ্ত জল পৌঁছে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন।